লেখাটি যারা পড়োনি পড়ে নাও। তোমার জীবনকে পরিবর্তন করে দিতে পারে আমার লেখার অসিলায়।
ভাইরে, স্বপ্ন নয় এবার ইচ্ছে হোক তুমি দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ বুয়েট, ঢাবি, শাবিপ্রবি পড়বে কিংবা ডিএমসিয়ান হয়ে দেশের জন্য লড়ে যাবে। তোমার মতো অদম্য মানুষের দিকনির্দেশনা দিতে আজ আমার এই সৃজনশীল লেখনি। প্রস্তুতি নিয়ে চলো চূলছেড়া অভিযান দেই।"
কখনও কি খোলামাঠে গিয়ে বুকভরে নিঃশ্বাস নিয়ে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেছো -"আমি পেরেছি৷ হ্যা, আমিও পারি।" কাশফুল পাশে থাকলে আরও ভালো। তবে এটা অবশ্যই উত্তরার দিয়াবাড়ি হওয়া যাবেনা। হ্যা, যে স্বপ্ন তোমাকে ঘুমাতে দেয়না, যে স্বপ্নকে চেষ্টার মাধ্যমে ইচ্ছায় রূপান্তর করা যায় আজ তা নিয়ে তোমাদের বলবো। যেভাবে তুমি এই মুহূর্তে দেশের সবথেকে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী থেকে নিজের ইমপ্রুভ করে হয়ে উঠবা Rising star।
আমাদের দেশে পিছনের সাড়ির শিক্ষার্থীদের মানুষ বলা হয়না। ভালো স্কুল - ভালো কলেজ মানে দামি আসবাবপত্র কিংবা দামী বেতনে পড়াই সাধারণত বোঝানো হয়। কতটা কলেজ-এ নটরডেম কলেজের মতো গুণগত শিক্ষা দেয়া হয়? কতটা স্কুলে আমিরখানের তাড়ে জানিন পার সিনেমার মতো হাতে কলমে শিখায়? কিংবা বাংলাদেশের শিবরাম স্কুলের মতো হয় যেখানে প্রাইমারি গন্ডিতেই শুদ্ধ ইংরেজি বলে? এদেশে যারা ভালো করে সাধারণত নিজের মাথাকে কাজে লাগিয়ে চেয়ার-টেবিল দিয়েই করে। প্রতিষ্ঠান তোমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাইয়ে দেবেনা। তুমি ঠিক এখন থেকে পড়তে বসো এমনভাবে- যা পড়বে পড়ার মতো পড়বে৷ সাত জন্মেই ভূলবে না। যা এখন পড়লে প্রতি চার ঘন্টা পরপর রিভিশন দাও মানে চোখ বোলাও। মনে থাকতে বাদ্ধৃ। যা মনে থাকেনা ৫০ বার রাফ খাতায় টানা লেখো। তুমি যেখানেই পড়না কেনো তুমি যতবারই ফেল করনা কেন You must be a boss. এখন নটর ডেইম কলেজ থেকে সবসময় বুয়েটে প্রথম হয়না ভাই। এখন দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকেও বুয়েটে প্রথন হয়।
তোমার বিশ্বাস তোমাকে পড়ার মাধ্যমে তৈরি করে নিয়ে আসতে হবে। It can make you or it can break you.
আত্মবিশ্বাস এটাই তুমি আজ গণিতে দূর্বল কাল তুমি গণিতে সবচেয়ে ভাল করবে। আজ তুমি ইংরেজিতে দূর্বল কাল ইংরেজি তোমার স্ট্রং জোন হবে৷ আমার রুমমেট ৪.২৫ পেয়েও সাস্টের প্রায় সব ইন্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট পেয়েছে। ৪.১৭ নিয়ে আমার এক ছোট ভাই ঢাবিতে টপ ৩০০ তে। আমার অনুপ্রেরণায় ঢাবিতে ২৫ তম হয়েছে এক ছোট ভাই। জিপিএও তোমাকে এতোটা পিছিয়ে রাখবেনা গোল্ডেনধারীদের চেয়ে। ভালো ফলাফলের সর্বোচ্চ চেষ্টা করো৷ না পারলে ইটস ওকে৷
তুমি যখন চোখ বন্ধ করলে বলবে - আমি গণিতে অধিক দূর্বল তখন আমি বলবো আমার গণিত স্যার ক্লাসে সবার সামনে আমার মাকে ডেকে এনে বলেছিলো তোমাকে দ্বারা কিছুই হবেনা। আজ আমি কি হেরে গেছি?
আমিই একমাত্র শিক্ষার্থী হাই স্কুলে নবম শ্রেণির ফাইনালে হায়ার ম্যাথে ফেইল। আমি স্কুলের ইতিহাসে এসএসসিতে সবচেয়ে ভালো ফলাফল করেছি৷
যেভাবে তুমি সেরাদের মধ্যে সেরা হবেঃ
১. বইকে বৌ -এর মতো করতে হবে৷ পড়াশোনা কারোরই ভালোলাগেনা। কিন্তু তোমার যে স্বপ্ন তোমাকে ঘুমাতে দেয়না, তোমার মা-বাবা হাজারো আশা নিয়ে চোখের জল ফেলছে সেসবের কথা মনে করো। পড়ার সময় সর্বোচ্চ মনোযোগ দাও। পড়তে বসে মেসি কিংবা রোনালদো এর ছবি দেখা যাবেনা কিংবা ছকিনা জড়িনা - এর কথা মনে করা যাবেনা। ২৪ ঘন্টাকে ৪৮ ঘন্টা করে ফেলো৷ একটু আগে তোমার মা কিংবা ভাই তোমাকে বকেছে কিংবা বন্ধুর সাথে ঝগড়স হয়েছে এটা যেনো বোঝা না যায়৷ You must give proper attention.
২. ঘুম, খাওয়া বাদে গড়ে ১৫ ঘন্টা পড়াশোনায় থাকার চেষ্টা করো৷ মনে করো টানা এক ঘন্টা পড়তে পারো৷ এক ঘন্টা পর পনের মিনিট রেস্ট নাও৷ দু"ঘন্টা পড়লে ত্রিশ মিনিট রেস্ট নাও। একদিন ঘুরতে গিয়ে পড়বেনা অন্যদিন পড়াশোনা করে ফাটিয়ে দিবে এটা চলবেনা। সম্ভব হলে বিয়ে / জন্মদিন -এর দাওয়াত যতটা সম্ভব কমিয়ে দাও।
মূল বইঃ তপন + ইসহাক + তোমার যা ইচ্ছে ।
৩. পদার্থ - রসায়নে প্রতিটাতে যে কোনো একটা বইকে মূল বই হিসেবে নাও। পদার্থ তে - জটিল বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করো যেমন প্রাস, আপেক্ষিক গতি ইত্যাদি৷ এসব বিষয়ে যেনো পড়াতে পারো যে কোনো সময়। কমপক্ষে তিনটি বইয়ের উদাহরণ ও একটা বইয়ের অনুশীলনী করো৷ রসায়নে পর্যায় সারণি, জৈব যৌগ এর বিভিন্ন যৌগের প্রস্তুতি, কে কোন বিক্রিয়া করে ইত্যাদি নিয়মিত রিভিশন দাও৷
মূল বইঃ গুহ স্যার বেস্ট
৪. গণিতে অবশ্যই ফরমূলা নিয়মিত রিভিশন দিবা। খেতে খেতে দেখতে পারো ফরমূলা৷ You must be a formula bank যে ম্যাথগুলো করলে বারবার চোখ বোলাও। একই ম্যাথ দিনে কমপক্ষে তিনবার চোখ বুলিয়ে নাও। নোটখাতা অবশ্যই থাকতে হবে। থিয়োরি তুমি পড়তো? কনসেপ্ট ক্লিয়ারের জন্য অবশ্যই পড়তে হবে। উদাহরণ বুঝে বুঝে কেতাব স্যারের বই করলে অনুশীলনী এর সিংহভাগ নিজেই পারবে৷
ভাইরে, বারবার বলি কী ওয়ার্ড তৈরি করে বই দাগিয়েছোতো? পুরো লাইন আবুলের মতো দাগাবানা। ছেরাবেড়া করে বই দাগাবানা। শৈল্পিকভাবে মার্ক করবা সাল, একক, কনভার্ট, আবিষ্কার, প্রয়োজনীয় তথ্য ইত্যাদি৷
সাবধান!
ক. না বুঝে একটা লাইনও পড়বেনা;
খ. ফুংফাং ছেলেমেয়েদের সময় দিবেনা;
গ. আমি বুয়েটে চান্স পেলেতো তোমার বাবা মেনে নিবে? এই কথা বলে এক ঘন্টা কথা বলবেনা। তাহলে ছকিনা দক্ষিণায় চলে যাবে। বুয়েটও ভাত জুটবেনা।
LIFE CHANGING EXPERIENCES :
বই লিখে পৃথিবীর একমাত্র বিলিয়নেয়ার হওয়ার ব্যক্তিটির নাম জে কে রাওলিং। হ্যারি পটার সিরিজ ১৪ টা প্রকাশনা সংস্থা ফিরিয়ে দিয়েছিলো। তিনি নিরাশ হননি। তবে একসময় সুইসাইডও করতে চেয়েছিলেন। তাঁর বই থেকে যতটা সিনেমা বের হয়েছে সবকটি ব্লকবাস্টার। তুমি কি সবকাজেই সফল হতে চাও, ভাই?
আমার অনুপ্রেরণামূলক লেখা পড়ে এক আপু ম্যাসোজ দিয়েছিলো দুবছর আগে। খুব কম বয়সে ঢাবিয়ান এক ভাইয়ার সাথে বিয়ে হয়। অনেকক্ষেত্রে আপুকে ছোট হতে হয়েছিলো শশুরবাড়িতে। দীর্ঘ দশ বছর বিয়ের হয়ে গেলেও তিনি সন্তান নেননি। কেনো জানেন? বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য৷ এই একটি স্বপ্ন শত শত অপমানের পরও তাকে বাঁচতে শিখিয়েছে নিজের জন্য। তুমি কি একবারেই হেরে যাবে, ভাই?
এবার এক ভিন্ন ধরণের গল্প বলি। বাস্তব সুপার হিরোর গল্প। আমার ফুফা ডালিতে ডালিতে করে পান বিক্রি করতো৷ তার ছেলেমেয়ের সংখ্যা প্রায় নয়জন। এই পান বিক্রি এই পর্যায়ে গেছিলো তিনি প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা ইনকাম করে। উপজেলায় যতো পান যায় তিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন। কোনো পেশাকেই ছোট করে দেখতে হয়না৷ একই উপজেলায় এরশাদপুরী জর্দার মালিক যিনিও ডালিতে করে জর্দা বিক্রি করতো৷ পাঁচ বছর আগে তার মাসিক আয় ছিলো ৩০ লাখ টাকার ওপরে৷ তুমি যদি নিজের তৈরি ব্যবসাকে সৃজনশীলভাবে প্রসারিত করো তাহলে তুমি উদ্দোক্তা৷
জেদ থাকতে হবে, ভাই। প্রচন্ড রকম জেদ৷ আমি এমন একজন স্টুডেন্ট জীবনে প্রতিটি ক্লাসে ফেইল করতাম। আমার জেদটা ভিন্ন জায়গায়৷ আমি যখন চ্যারিটি সংগঠন নিয়ে কাজ শুরু করি কলেজে তখন টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছিলাম৷ সব পরীক্ষায় ফেইল করি কলেজে। এমনকি টেস্টে তিন সাবজেক্টে ফেইল৷ এসএসসিতে গোল্ডেন এপ্লসসহ বোর্ড বৃত্তি নিলেও এইচ এস সি তে ৪.১০। আমার মামা বললেন - তোমার জন্য সংগঠন নয়৷ আমি দেখলাম আমার যে বন্ধুটি বুয়েটের সেরা সাবজেক্ট পেয়েছে সে দেশ নিয়ে ভাবছে না। আমি দেখলাম যে বান্ধবীরা রংপুর মেডিকেল কলেজ-এ চান্স পেয়েছে তাদের গরীবদের সেবা করার ইচ্ছে নেই৷ তাহলে আমি ভালো জায়গায় গিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই আমি সবার মতো না। এই জেদেই আমি আবার এইচ এস সি অর্থাৎ ইমপ্রুভমেন্ট দিলাম। কলেজের সবচেয়ে ভালো ইমপ্রুভ হলো। জায়গা হলো দেশসেরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই জেদেই আমি আজকে কমবয়সে সবচেয়ে বেশী শিশুর অপারেশন করিয়েছি। শুধু হ্রদরোগ ও চোখের অপারেশন করিয়েছি দশটা৷ আজকে সেই বুয়েটের বন্ধুটি একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে৷ আমার ছোট ছোট অনেক জায়গা থেকে জব অফার পেলেও স্বপ্ন তিন বছরের মধ্যে ফুড ইন্ডাস্ট্রি, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা নিজের অর্থায়নে। ইতিমধ্যে তিনটা ফরমাল স্কুল দিয়েছি। শোককে শক্তিতে পরিণত করে তোমার জেদের জায়গাটা বের করো। আজকে দেশসেরা কার্ডিয়াক সার্জন, আই স্পেশালিষ্ট, চাইল্ড স্পেশালিষ্ট যখন আমার কাধে হাত রেখে বলে - তুমি পেরেছো৷ তখন মনে হয় ডাক্তার হতে পারিনি কিন্তু একদিন মেডিকেল এনটারপ্রেইনার হবো ইনশাআল্লাহ।
জেগে উঠো তুমিও৷ তোমার নিজের জন্য, দেশের জন্য, দশের জন্য তোমাকে জাগতেই হবে। ফ্যান্টাসি, ডেটিং, চ্যাটিং, ফ্লাটিং জীবন হতে পারেনা। আমি তোমাকে দেশসেরা বিদ্যাপীঠে দেখতে চাই। সায়েম ভাইকে ডাকবে সেমিনার করার জন্য৷ ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গে সর্ববৃহৎ কয়েকটি সেমিনার করেছি। তুমি স্বপ্ন দেখাবে৷ পারলেনা পাবলিকিয়ান হতে? সফল হওয়ার চেষ্টা কর অন্যদিকে। Bangladesh is a land of opportunities. রেস্টুরেন্ট দিলে বিএফসি, কাজী ফার্মস এর মতো স্বপ্ন দেখো। বাবুর্চি হলে টমি মিয়ার মতো হও। ক্রিকেট খেললে সাকিব আল হাসান হও। ওপরের সৃষ্টিকর্তা কাউকে ছোট করে তৈরি করেননি। তুমি কোননা কোন কাজে ভাল, ভাই।
ঠিক এই মুহূর্তে মা'এর মুখখানা স্মরণ করো আর শুরু করে দাও জীবন। হতাশ হলে সায়েম ভাইতো আছেই।

0 Comments